দ্বিশতবর্ষে মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ রচনা | Michael Madhusudan Dutta Jiboni in Bengali

নাট্যকার মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ রচনা pdf | Michael Madhusudan Dutta Jiboni in Bengali | দ্বিশতবর্ষে মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ রচনা | মাইকেল মধুসূদন দত্ত

দ্বিশতবর্ষে মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ রচনা | Michael Madhusudan Dutta Jiboni in Bengali

আজকে তোমাদের পরীক্ষার জন্য মাইকেল মধুসূদন দত্ত - প্রবন্ধ রচনা তুলে ধরা হল, যেটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে পারে। অতএব আপনি এখান থেকে এটি পরে নিতে পারেন আথবা সংগ্রহ করতে পারেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা: ব্যক্তিগত জীবনে যিনি সংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন এবং কাব্য সাহিত্য সৃষ্টিতে পুরোনো ধ্যানধারণা বিচূর্ণিত করে নতুন ভাবধারা ও আঙ্গিক শৈলী প্রতিষ্ঠা করেছেন, যৌবনে উচ্চাশায় তাড়িত হয়ে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ, বিদেশিনী পরিগ্রহ, গৃহত্যাগ ও বান্ধবহীন নিঃসঙ্গ জীবন যাপনে ব্যক্তিগত জীবনে বিদ্রোহের পরিচয় দিয়েছেন, যাঁর সাহিত্য মাৎসর্য ও বিষদংশন উপেক্ষা করে নবজীবনাদর্শের প্রচারে তাঁর বিদ্রোহী মানসিকতার পরিচয় বহন করে, বাংলা সাহিত্যের সেই প্রথম বিদ্রোহী এবং নবজাগরণের কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম। দ্বিশত বর্ষের প্রাক্কালে তাঁকে স্মরণ ও মনন করা প্রতিটি বাংলা সাহিত্যামোদীর একান্ত কর্তব্য।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: বর্তমান বাংলাদেশের যশোহর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে জানুয়ারি মাইকেল মধুসুদন দত্তের জন্ম হয়। তৎকালীন যুগের প্রভাবশালী ধনী জমিদার আইনজীবী রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন তাঁর পিতা। রাজনারায়ণের প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান ছিলেন মধুসূদন।

ছাত্রজীবন: প্রায় সাত বছর বয়স পর্যন্ত মধুসূদন তাঁর গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। এরপরে কলকাতার খিদিরপুর এসে সেখানে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানকার পাঠ সমাপ্ত করে ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু কলেজে তাঁর পরবর্তী পঠনপাঠন শুরু হয়। তিনি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। প্রতি বছর বৃত্তি পেতেন। এখানে শিক্ষাগ্রহণ কালে তিনি সহপাঠী হিসেবে ভূদেব মুখোপাধ্যায়, গৌর দাস বসাক, ভোলানাথ চন্দ্র, বন্ধুবিহারী দত্তের মত বন্ধুদের পেয়েছিলেন। যাঁরা পরবর্তীকালে স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য হয়েছিলেন। এরপর ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উচ্চাকাঙক্ষার বশবর্তী হয়ে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এই সময় থেকে তিনি 'মাইকেল মধুসুদন' নামে পরিচিত হন। ফলস্বরূপ তাঁর পিতা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। এবং তিনি হিন্দু কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়ে শিবপুর বিশপ কলেজে ভর্তি হন। এর পরেও তাঁর ক্ষুদ্ধ ও ক্রুদ্ধ পিতা আরও চার বছর সময় তাঁর শিক্ষা ও অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করা সত্ত্বেও তাঁকে পুনরায় স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন করাতে না পেরে সমস্ত টাকা পয়সা দেওয়া বন্ধ করেন। ফলে বাধ্য হয়ে মধুসুদন এখানকার পাঠ সমাপ্ত করে ভাগ্যান্বেষণে তৎকালীন মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে আসেন। শুরু হল বন্ধুর কর্মজীবন।

কর্মজীবন: মাদ্রাজে এসে গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য তিনি Madras Circulator, Athaeneum, Hindoo, Madras spectator নামে চারখানা ইংরেজি কাগজ অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পাদনা এবং সেই সঙ্গে একটি অনাথদের বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করতে থাকেন। ঐ সময় তিনি ঐ বিদ্যালয়ের ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ছাত্রী রেবেকা ম্যাকটিভিসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের সাত বছরের দাম্পত্যজীবনে চারটি সন্তানের জন্ম হয়। এরপর তিনি তাদের ত্যাগ করে হেনরিয়েটা নামে এক ফরাসী মহিলার পাণিগ্রহণ করেন। ইত্যবসরে তিনি Timothy Penpoem ছদ্মনামে 'The Visions of the past, The Captive Lady ইত্যাদি কয়েকটি ইংরেজি কবিতা, খণ্ডকাব্য ও কাব্য রচনা করেন। কিন্তু এই সব ইংরেজি কাব্য রচনায় সুনাম অর্জন করতে না পেরে অবশেষে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে এসে তিনি বাংলা কাব্য-কবিতা রচনায় মনোনিবেশ করেন।

কাব্যসৃষ্টি: প্রথমে তিনি সংস্কৃত 'রত্নাবলী' নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন। পরে তিনি 'শর্মিষ্ঠা', 'পদ্মাবতী ও কৃষ্ণকুমারী' নাটক, 'তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য (১৮৬০), 'মেঘনাদবধ কাব্য' (১৮৬১), 'ব্রজাঙ্গনা কাব্য' (১৮৬১), 'বীরাঙ্গনা কাব্য' (১৮৬২), এবং 'চতুর্দশপদী পদাবলী' (১৮৬৬), 'হেক্টর বধ' ও 'মায়াকানন' (মৃত্যুর পর প্রকাশিত) ইত্যাদি কাব্য নাটক রচনা করেন। এ ছাড়াও তাঁর রচিত 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' এবং 'একেই কি বলে সভ্যতা' নামে দু'খানি প্রহসন রচনা এবং ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে দীনবন্ধু মিত্র রচিত 'নীলদর্পণ' নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ উল্লেখযোগ্য।

ব্যক্তিগত জীবন: এরপর ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে ব্যরিস্টারি পড়ার জন্য ইংলন্ড গমন করেন। ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে যান। ফ্রান্সে অবস্থানকালীন তিনি তীব্র অর্থকষ্টে পতিত হন এবং পরে বিদ্যাসাগরের অর্থ সাহায্যে সেই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ লাভ করেন। পরে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করে ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে যোগদান করেন। কিন্তু এই পেশায় বিফলকাম হয়ে 'Examiner of the privy council Records'-এ নিযুক্ত হন। পরে এই কাজ ছেড়ে পঞ্চকোট রাজার আইন উপদেষ্টা পদে যোগদান। করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বাউন্ডুলে প্রকৃতির এবং চরম অমিতব্যয়ী ছিলেন।

মৃত্যু: অবশেষে বিশপ হাসপাতালের রোগশয্যায় বান্ধব ও আত্মীয়র বর্জিত অবস্থায় অশেষ দুর্দশার মধ্যে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জুন মাত্র ৪৯ বৎসর ৫ মাস ৪ দিন বয়সে এই মহাকবির জীবনাবসান ঘটে।

আরও পড়ুন: রাজা রামমোহন রায় জীবনী রচনা

সাহিত্যবৈশিষ্ট্য: বাংলা সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন পথ-প্রদর্শক। তিনিই প্রথম 'মেঘনাদবধ কাব্য' রচনা করে বাঙালিকে বাংলা মহাকাব্যের স্বাদ দিয়েছিলেন। তেমনি তিনি। প্রথমত 'ব্রজাঙ্গনা' নামে একটি গীতিরসাশ্রিত জাতীয় কাব্য, বীরাঙ্গনা নামে রোমান অরিদের আদর্শে অনুপ্রাণিত নারী স্বাতন্ত্র্যের দুঃসাহসী পত্রকাব্য এবং 'চতুর্দশপদী পদাবলী' কবিতাবলিতে বাংলায় সনেট রচনা পথপ্রদর্শন করেন।

উপসংহার: মধুসূদনের হৃদয়ের অন্তরালে গীতিকবিতার রস প্রবাহিত ছিল। তাঁর রচিত মহাকাব্যে সেই গীতিবন, চতুর্দশ পদাবলিতে গীতিমন এবং অন্যান্য কাব্য কবিতার মধ্যে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম লিরিক বা গীতি-বৈশিষ্ট্যের সূচনায় তিনি যে বিস্ময়কর প্রতিভা ও অক্ষয় প্রাণশক্তির পরিচয় দিয়েছেন এবং যার দ্বারা বাংলা কাব্যে জীবনচেতনা ও বাকরীতিতে ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির সূচনা হয়েছিল সেই যুগ প্রবর্তনের অগ্রদূতকে জন্ম দ্বিশতবর্ষের প্রাক্কালে শতকোটি প্রণাম জানাই।

Post a Comment