জন্ম শতবর্ষে সলিল চৌধুরী - জীবনী রচনা | সলিল চৌধুরী প্রবন্ধ রচনা

জন্ম শতবর্ষে সলিল চৌধুরী - জীবনী রচনা | সলিল চৌধুরী প্রবন্ধ রচনা

জন্ম শতবর্ষে সলিল চৌধুরী - জীবনী রচনা | সলিল চৌধুরী প্রবন্ধ রচনা

ক্লাস ১২ এর জন্য পরীক্ষায় জীবনীমূলক প্রবন্ধ রচনা লিখে আসলেই যথেষ্ট নম্বর পাওয়া যায়। টাই আজকে উচ্চমাধ্যমিক এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জীবনী - জন্ম শতবর্ষে সলিল চৌধুরী, শেয়ার করলাম। যেটি তোমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেহেতু এবছর গীতকার সলিল চৌধুরীর শতবর্ষ পূর্ণ হল, সেদিক থেকে পরীক্ষায় জীবনী মূলক প্রবন্ধ রচনার সেকশনে আসার প্রবণতা রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিন্মে খুব সহজ ভাষায় এবং পয়েন্ট করে জীবনী রচনাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। শীঘ্রই পরে নাও আথবা প্রয়োজনে খাতায় টুকে নাও।

জন্ম শতবর্ষে সলিল চৌধুরী

ভূমিকা: সলিল চৌধুরী, বাংলা সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, শুধুমাত্র সুরস্রষ্টা হিসেবেই নন, একজন কবি, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও স্মরণীয়। লোকজ সংগীত, পশ্চিমী ধাঁচের মেলবন্ধনে তাঁর সুর ও সংগীত এক অসাধারণ ছন্দময়তার নিদর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার গান থেকে শুরু করে ভারতের চলচ্চিত্র সংগীত পর্যন্ত তিনি যেন ছিলেন এক জাদুকরী স্পর্শ। সলিল চৌধুরী, যিনি আমাদের কাছে সলিল দা নামে পরিচিত। তাঁর গানে যেমন প্রেমের মাধুর্য, তেমনি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক গভীর ছাপ লক্ষ করা যায়। বিপ্লব, প্রেম, এবং সমাজ সচেতনতা মিলিয়ে তাঁর গানে এমন এক আবেগ ফুটে উঠেছিল, যা বাংলা সংগীতকে এক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

সলিল চৌধুরীর জন্ম ১৯ নভেম্বর, ১৯২৫ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে এক বাঙালি কায়স্থ পরিবারে। তাঁর বাবা জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরী ছিলেন ব্রিটিশ চা বাগানের চিকিৎসক, তবে সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগী। ছোটবেলা থেকেই সলিল সংগীতের সংস্পর্শে আসেন, বিশেষ করে তাঁর বাবার কাছ থেকে। তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে চা বাগান জুড়ে, ফলে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা, কষ্ট এবং সংগ্রামের নানা দিক তিনি ছোট বেলাতেই প্রত্যক্ষ করেন।

শিক্ষাজীবন

সলিল চৌধুরী মামাবাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুভাষগ্রাম থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। হারিনাভি বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের সূচনা ঘটে এবং সেখান থেকেই তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক (আইএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে, তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক (বি.এ.) ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজ জীবনে তিনি যোগ দেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ (আইপিটিএ) এর সাথে।

আরও পড়ুন: বাংলা ভাষা সাজেশন ২০২৫ | উচ্চমাধ্যমিক ভাষাবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৫

সংগীত জীবন

সলিল চৌধুরীর সংগীত জীবন মূলত শুরু হয় কলকাতায়। ১৯৪৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক দলে যোগ দিয়ে তিনি গণনাট্য সংঘের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সংগীতের শক্তি পৌঁছে দিতে শুরু করেন। সেইসময়ে গ্রামেগঞ্জে 'রানার', 'বিচারপতি', 'অবাক পৃথিবী' প্রভৃতি গণসংগীত গুলি সাধারণ জনসমাজের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী সলিল চৌধুরীর গানের সুরের মধ্যে যেমন পল্লিগীতির আবহ ছিল, তেমনই ছিল পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রভাব। সলিল চৌধুরীর সুরের জগতে এক অভিনব বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলন। তাঁর সৃষ্ট সুরে শোনা যায় গিটার, বেহালা, বাঁশি, ও পিয়ানোসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গম।

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে 'পরিবর্তন' ছবির সংগীত পরিচালকরূপে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ায় তিনি পা রাখেন 'দো বিঘা জমিন' ছবির সূত্রে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে 'চেম্মিন' ছায়াছবির সংগীত নির্দেশনা করেন। সংগীত নির্দেশনার জীবনে তিনি প্রায় ৭৫টি হিন্দি ছবিতে, প্রায় ৪০টি বাংলা ছবিতে, অন্তত ২৬টি মালয়ালম্ ছবিতে এবং বেশ কিছু মারাঠি, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, গুজরাটি, ওড়িয়া ও অসমিয়া ছবিরও সংগীত পরিচালনা করেন। 'বাঁশের কেল্লা', 'বাড়ি থেকে পালিয়ে', 'কিনুগোয়ালার গলি,' 'আকালের সন্ধানে', 'হাফটিকিট' প্রভৃতি ছবিগুলির সংগীত পরিচালনার কৃতিত্ব তাঁর।

সাহিত্যে অবদান

সলিল চৌধুরী শুধুমাত্র সংগীতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তিনি লেখালেখিতেও দক্ষ ছিলেন। তাঁর লেখনীতে সহজ ভাষা, সংলাপ এবং সাধারণ মানুষের অনুভূতি প্রতিফলিত হত। তাঁর কবিতা এবং ছোটগল্পগুলি বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। বিশেষত তাঁর লেখা 'ড্রেসিং টেবল' গল্পটি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করেছে। তাঁর সাহিত্যকর্মেও বিপ্লবী চেতনা এবং সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

সলিল চৌধুরী তাঁর সৃষ্টির জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৮৮ সালে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন, যা তাঁর কর্মজীবনের অন্যতম মাইলফলক ছিল। বাংলা এবং ভারতীয় সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মী নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে বলেছিলেন, "সলিল একজন পূর্ণকালের লেখক এবং সংগীতশিল্পী, যিনি সৃষ্টির উৎসকে কখনও হারাননি।"

উপসংহার: ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি পৃথিবীকে চির বিদায় জানান। সারাজীবন ব্যাপী তাঁর বহু পরীক্ষার ফলশ্রুতিতে গণসংগীতে কোরাস গানের প্রভাব ফুটে উঠেছে 'ও আলোর পথযাত্রী', 'ঢেউ উঠছে কারা টুটছে', 'মানবো না বন্ধনে'- এইসকল কালজয়ী গানে। বলাবাহুল্য, গণসংগীতের ব্যবহারে তিনি উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় রেখেছেন। বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের পরে এমন বহুমুখী, বিচিত্রগামী, সংগীত প্রতিভা বাংলা গানের জগতে বিরল দৃষ্টান্ত।

আরও পড়ুন: শতবর্ষে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জীবনী রচনা

আশা করছি আজকের জীবনী রচনাটি তোমাদের ভালো লাগবে এবং প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে। ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দেবে। এবং ভবিষ্যতে এরকম আরও পোস্ট পেতে আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে থাকুন।

Post a Comment